স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরিক্ষায় অধিকাংশ সময় রচনা হিসাবে স্বদেশ প্রেম আসে। তাই আমরা আপনাদের সামনে স্বদেশ প্রেম রচনাটি ২০ টি পয়েন্ট এমন ভাবে উপস্থাপন করেছি যা আপনি মুখস্থ বা ধারনা নিয়ে রচনা টি পরিক্ষায় অনায়াসে  লিখতে পারবেন।

ভূমিকা

একটি দেশের নাগরিক হিসেবে সেই দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য ভালোবাসা প্রকাশ করাকে স্বদেশপ্রেম বলে। প্রতিটি শিশুর জন্মের পর থেকেই স্বদেশের আলো-বাতাস ও মাটিতে মিলেমিশে বড় হয়ে ওঠে ফলে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। তাইতো কবি বলেছেন দেশের উপকারে যে ব্যক্তির নেই মন কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।

স্বদেশ প্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট

স্বদেশ প্রেম কি? 

মাতৃভূমির প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করা এবং তার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করাকে স্বদেশ প্রেম বুঝায়। কেননা মাতৃভূমির প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা থাকলে তবেই একজন দেশপ্রেমী হওয়া সম্ভব। একজন মা যেমন তার সন্তানকে আগলে রেখে বড় করে তদ্রূপ স্বদেশ তার নাগরিকদের সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন। 

স্বদেশ প্রেমের উৎস

একজন ব্যক্তির নিজের প্রতি যত টুকু ভালোবাসা প্রকাশ পায় তদ্রূপ স্বদেশের প্রতি ততটুকু ভালোবাসা প্রকাশ পেয়ে থাকে। কারণ স্বদেশ সন্তানের মত করে প্রত্যেকটি নাগরিককে লালিত-পালিত করে থাকেন। এছাড়াও আলো-বাতাস ও খাদ্য সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় সুবিধা গুলি প্রদান করে থাকেন।

ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম

একটি দেশ ও জাতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান মাধ্যম হল ছাত্র। কারণ ছাত্ররাই পারে একটি দেশ ও জাতিকে আশা পুরনের আশ্রয়স্থলে পৌঁছে দিতে। ছাত্রজীবনে অবস্থায় প্রতিটি নাগরিক তার দেশের প্রতি অনুগত ও ভালোবাসা প্রকাশ করার মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যান।

স্বদেশ প্রেমের স্বরূপ

মায়ের প্রতি সন্তানের যেমন ভালবাসার জন্মায় তদ্রূপ একজন দেশ প্রেমিকের কাছে তাঁর স্বদেশের প্রতি ততটুকুই ভালোবাসার জন্মে থাকে। একজন দেশ প্রেমিকের কাছে তার মাতৃভূমি যত দারিদ্র-পীড়িত ও অনুন্নত ই হোক না কেন। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসা এবং তার মাতৃভূমি তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ।

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের স্বদেশ প্রেম

১৯৫২ সালে ১৪৪ ধারা জারী করা হলে ছাত্রজনতা ভঙ্গ করে ভাষা আন্দোলনের জন্য এগিয়ে যায়। পাকিস্তান বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে রফিক, সালাম ও জব্বার মত অনেক তরুণ রাজপথে জীবন দেয়। ফলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করে এটি হচ্ছে দেশের প্রতি প্রেম।  একজন দেশ প্রেমিক স্বদেশের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন তার প্রমান বহন করে। 

দেশপ্রেম প্রকাশ

দেশ প্রেমিকেরা দেশের জন্য যেকোনো গৌরবোজ্জ্বল অর্জনে গর্ববোধ করে থাকেন। এছাড়াও নানা ভাবে দেশ প্রেম প্রকাশ করে থাকেন। দেশের জন্য যেকোনো ধরণের ত্যাগ স্বীকার করতে সর্বদাই নিজেকে প্রস্তুত রাখেন। স্বদেশের জন্য দেশ প্রেমিকেরা বীরত্বের ভূমিকা রাখেন বিভিন্ন যুদ্ধে জীবন কে উসসরগ করে দিয়ে। 

স্বদেশ প্রেম শিক্ষা

প্রত্যেকটি নাগরিক জন্ম গ্রহণ করার পর থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে স্বদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ফলে স্বদেশের জন্য কল্যাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি গড়ে ওঠে। স্বদেশের প্রতি আরো গভীর ভালোবাসা প্রকাশের জন্য স্বদেশের সম্বন্ধে বেশি বেশি করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এবং শুধু বইয়ের পাতায় স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন না করে তা বাস্তব জীবনে করতে হবে।

দেশ প্রেমের উপায়

কবি বলেছেন দেশের উপকারে যে ব্যক্তির নেই মন কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন। এছাড়াও ইসলাম ধর্মে ঘোষিত রয়েছে যে স্বদেশের প্রতি প্রেম হলো ঈমানের একটি অঙ্গ সমূহ। তাছাড়াও বিশ্বে যত গুলো ধর্ম রয়েছে সব ধর্মেই স্বদেশের জন্য প্রেম থাকার কথা বলা হয়েছে। 

সামাজিক পরিস্থিতি ও দেশপ্রেম

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে মানুষ গুলো নিজ স্বার্থের জন্য বেশি পরিমাণে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে স্বদেশের জন্য ভালোবাসা লোপ পাচ্ছে। সকলে দেশের কথা চিন্তা না করে নিজ স্বার্থকে বড় মনে করে ক্ষতি করেই যাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে এবং গরিবেরা দিন দিন আরও গরিব হয়ে যাচ্ছে ফলে দেশে অভাব ও দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হচ্ছে। 

বাঙালির স্বদেশ প্রেম

পৃথিবীতে অসংখ্য যুগে যুগে দেশপ্রেমিকরা জন্মগ্রহণ করেছেন। তারা নিজ দেশের জন্য সর্বদাই কাজ করে গিয়েছেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দেশের জন্য অনেক বড় অবদান রেখে গেছেন। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনের সময় রফিক, শফিক ও জব্বার সহ আরো নাম না জানা অনেক তরুণ দেশের জন্য ও রাষ্ট্রভাষা কে বাংলা করার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন।

স্বদেশ প্রেমের উগ্রতা

বর্তমান সমাজের নাগরিকরা নিজ স্বার্থ জন্য স্বদেশের প্রতি উগ্রবাদী হয়ে উঠেছেন। ফলে স্বদেশের দিকে নিয়ে এসেছেন ভয়ানক সর্বনাশ পরিণতি। উগ্র দেশপ্রেমের ফলে স্বজাতির শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা কে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হয়।  ফলে জাতির জীবনে তা বিপদজনক ও ভয়াবহ পরিণতি হিসেবে বয়ে আসে।

চির-অকল্যাণকর উগ্র দেশপ্রেমের মানসিকতা আমাদের মাঝ থেকে দূরে সরে ফেলতে হবে। নয়তো জার্মানির হিটলার এর উগ্র দেশ প্রেমের কারণে যে লাখো লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল তদ্রূপ স্বদেশের প্রতি ও এমনটা হতে পারে।

স্বদেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ

প্রত্যেকটি মানুষের তার নিজ দেশের প্রতি প্রেম-ভালোবাসা সর্বদাই উদার এবং তা খাঁটি হয়। এই ভালোবাসা মানুষের আত্মপ্রেম কেউ ছাড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়। প্রাকৃত অর্থে যে সকল ব্যক্তি দেশপ্রেমী তাদের মন-মানসিকতা কখনো ছোট মনের অধিকারী হয় না। তারা সর্বদাই নিজ দেশের কল্যাণ ও উন্নতি কিভাবে করা সম্ভব হবে সে বিষয়ে কাজ করে যায়। 

স্বদেশ প্রেম ও সাহিত্য

স্বদেশ প্রেমের প্রতি সাহিত্যের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি নিজের জ্ঞানকে গুরুত্বহীন জ্ঞান করে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভিন্ন দেশে কিন্তু তিনি ভিন্ন দেশের তার প্রতিভার কোন মূল্য পাননি। ফলে মাইকেল-মধুসূদন-দত্ত নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বদেশে ফিরে আসেন। স্বদেশে ফিরে এসে তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে নিজে দেশের প্রতি ভালোবাসা কে প্রকাশ করেন। 

আরোও দেখুন>

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বদেশ প্রেম

মুক্তিযুদ্ধের কথা গুলো স্মরণ করিয়ে দেয় কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতার মাধ্যমে। কবি তাঁর কবিতায় জীবন্ত প্রমাণ হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী তুলে ধরেছেন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বদেশপ্রেমের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ তিনি তার কবিতার মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটান। 

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম

প্রত্যেকটি নাগরিকের তার নিজ দেশকে ভালোবাসার মাধ্যমে বিশ্বকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। স্বদেশ প্রেম কখনো বিশ্ব প্রেমের প্রতি বাধা হয়ে দাড়ায় না।  জাতি-ধর্ম-বর্ণ, গোষ্টি, দেশ, ভাষা নির্বিশেষে সকলেই স্বদেশ প্রেমের চেতনায় উৎসাহিত হয়ে থাকেন। ফলে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমেই বিশ্ব প্রেমের প্রকাশ ঘটে থাকে। 

দেশপ্রেম ও রাজনীতি

প্রতিটি রাষ্ট্রের রাজনীতি বিদ্যমান রয়েছে। আর রাজনীতি হচ্ছে কোনো রাষ্ট্র পরিচালিত যে নীতির মাধ্যমে তা পরিচালনা করা হয়। রাজনীতির নেতাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সেবক হয়ে জনগণের সর্বদা পাশে থাকা এবং সেবা করা।

স্বদেশ প্রেম ও মূল্যবোধ

স্বদেশ প্রেম এবং মূল্যবোধ একে অপরের সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। স্বদেশ প্রেমের মাধ্যমে জাতি নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে সর্বদাই নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। দেশ প্রেমের ফলে জাতি সর্বদা অন্যায় থেকে বিরত থাকে এবং স্বদেশ প্রেমের প্রতি মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান করেন। 

দেশপ্রেমের প্রভাব

একজন নাগরিক তাঁর স্বদেশের প্রতি যে মহৎ চেতনায় মানব চরিত্রকে সৎ গুণাবলী মাধ্যমে বিকশিত করতে সক্ষম হয়। নিজ দেশকে ভালোবাসার ফলে নাগরিকের নিজ স্বার্থপরতা দূর হয়ে যায়। নাগরিক নিজ দেশকে ভালোবাসার ফলে আত্মসুখ ত্যাগ করে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করে দেন। 

উপসংহার

স্বদেশ প্রেম হচ্ছে মানব জীবনের একটি মহৎ গুণ। স্বদেশকে ভালোবাসার মাধ্যমে বিশ্বকে ভালবাসার আত্মপ্রকাশ ঘটে থাকে। এই প্রত্যেককে তার নিজ দেশকে বেশি বেশি করে ভালোবাসা এবং স্বদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা উচিত।

আপনারা যদি আমাদের আর্টিকেলটির ২০ পয়েন্ট এই পরীক্ষার খাতায় লিখেন তাহলে পূর্ণাঙ্গ মার্কস ক্যারি করতে পারবেন। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে। এছাড়াও স্বদেশপ্রেম কিভাবে লেখবেন তার  ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।

আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন। এছাড়াও শিক্ষামূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন ধন্যবাদ।  

Leave a Comment