স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম কি? স্বদেশ প্রেম হলো একটি রচনা। তবে মাঝে মাঝে পরিক্ষায় অনুচ্ছেদ হিসাবেও প্রশ্ন আসে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরিক্ষায় অধিকাংশ সময় রচনা হিসাবে স্বদেশ প্রেম আসে। তাই আমরা আপনাদের সামনে স্বদেশ প্রেম রচনাটি এমন ভাবে উপস্থাপন করেছি যা আপনি মুখস্থ বা ধারনা নিয়ে রচনা কিংবা অনুচ্ছেদ হিসাবে পরিক্ষায় লিখতে পারবেন। 

ভূমিকা

প্রতিটি মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার স্বদেশকে বা মাতৃভূমিকে ভালোবেসে থাকেন। দেশের উপকারে যে ব্যক্তির নেই মন কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন। প্রতিটি মানুষ জন্মের পর পরই নির্দিষ্ট দেশ ও সমাজে লালিত-পালিত হয়ে বেড়ে ওঠে ফলে সে দেশের প্রতি ও মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।

স্বদেশ প্রেম রচনা

স্বদেশ প্রেম কি? 

স্বদেশ প্রেম বলতে আমরা বুঝি, একটি দেশের নাগরিক হিসাবে সেই দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ভালোবাসার সাথে প্রকাশ করা কে। প্রত্যেক নাগরিকের উচিৎ নিজ দেশের প্রতি সন্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ করা। কেননা মাতৃ ভূমির প্রতি সন্মান ও ভালোবাসা থাকলে তবেই আপনি একজন স্বদেশ প্রেমি। 

স্বদেশ প্রেমের উৎস

প্রত্যেক ব্যক্তি তার জন্মভূমি স্বদেশর প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করে থাকে। যেমন একজন ব্যক্তির নিজের প্রতি যত টুকু ভালোবাসা প্রকাশ পায় তদ্রূপ  স্বদেশের প্রতি ততটুকু ভালোবাসা প্রকাশ পেয়ে থাকে। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো তার মা-ও মাতৃভূমি তাই সেখান থেকেই স্বদেশপ্রেমের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যেমন পশু জন্মভূমি ছেড়ে লোকালয়ে আসলে ছটফট করে, এবং পাখিকে তার বাসা ছাড়া করলে তার মর্ম বুঝি আর্তনাদ বাতাসে ভারী করে তুলে। 

তদ্রূপ নিজের বাসস্থান বা দেশ থেকে অন্য কোথাও চলে গেলে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। শিশু কাল থেকেই আমরা স্বদেশের মাটি, বাতাস, পানির সাথে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকি। যার ফলে তার প্রতি মমত্ববোধ থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশ প্রেম। 

 ছাত্রজীবনে স্বদেশপ্রেম

প্রতিটি দেশে ছাত্ররাই হলো সে দেশের ও জাতির ভবিষ্যতের কর্ণধার সাধনের মাধ্যম। দেশের উন্নতি ও জাতির আশা পূরণের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে ছাত্ররা। প্রতিটি ছাত্র তার শিক্ষা জীবনে নিজ দেশের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেন। প্রতিটি ছাত্রের কর্তব্য হলো শুধু বইয়ের পাতায় স্বদেশপ্রেমের প্রতি ভালোবাসা না দেখিয়ে তা বাস্তব জীবনে কার্যকর করা।

ছাত্র জীবনেই তারা দেশের জন্য অনেক কিছু সাধন করে থাকেন। তাইতো কবি বিদ্রোহী কন্ঠে প্রকাশ করেন। আমরা রচিত ভালোবাসার আশায় ভবিষ্যৎ, মোদের স্বর্গ-পথের আভাস দেখা আকাশ ছায়াপথ। মোদের চোখে বিশ্ববাসীর স্বপ্ন দেখা হোক সফল। তাই তোঁ আমরা ছাত্র।

স্বদেশ প্রেমের স্বরূপ

মানুষের হৃদয়ে গভীর অনুভূতি জন্মায় তার স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার জন্য। মায়ের প্রতি তাঁর সন্তানের ভালোবাসা যেমন পবিত্র তদ্রুপ একজন ব্যক্তির তার স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা ততটুকু পবিত্র।  একজন দেশ প্রেমিকের কাছে তার মাতৃভূমি যত দারিদ্র-পীড়িত ও অনুন্নত ই হোক না কেন। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসা এবং তার মাতৃভূমি তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ।

কারন সে ব্যক্তি শিশু  কাল থেকেই মাতৃভূমিতে বেড়ে ওঠে এবং একটি দেশের অধিবাসী হিসেবে পরিচয় লাভ করে। স্বদেশ থেকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সকল উপাদান পেয়ে থাকেন। ফলে স্বদেশের প্রতি মমতাবোধ সৃষ্টি হয়। আমরা উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি যে স্বদেশপ্রেমের প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণেই ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের স্বদেশ প্রেম

১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ার পর, পূর্ব পাকিস্তান(বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান(পাকিস্তান) নামে দুটি অঞ্চল হয়ে যায়। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার জন্যে কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বদেশের প্রতি ভালোবাসায় থাকায় তা করতে দেয়নি। ফলে ভাষা আন্দোলন এর সৃষ্টি হয়। এই আন্দোলনের ফলে ১৯৫২ সালে ১৪৪ ধারা জারী করা হলে ছাত্রজনতা ভঙ্গ করে ভাষা আন্দোলনের জন্য এগিয়ে যায়।  কিন্তু পাকিস্তান বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে রফিক, সালাম ও জব্বার মত অনেক তরুণ রাজপথে জীবন দেয়। 

আরোও দেখুন>

রফিক, শফিক ও জব্বার এর মত অনেক তরুণ রাষ্ট্রভাষার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তার ফলেই আমরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা হিসাবে পেয়েছি। তাইতো ইউনুস্কো ১৯৯৯ সালে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। এছাড়াও ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব গ্রহন করেন। তাই তো ২০০১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা একুশে ফেব্রুয়ারি হিসেবে সকল রাষ্ট্র তা পালন করে চলছে। 

দেশপ্রেম প্রকাশ

মানুষেরা নানাভাবে দেশ প্রেম প্রকাশ করে থাকেন। তারা দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। দেশের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে সর্বদাই অগ্রসর হয়ে থাকেন। এছাড়াও দেশের উন্নয়নের জন্য অবদান রেখে থাকেন। 

দেশ প্রেমিকেরা দেশের জন্য যেকোনো গৌরবোজ্জ্বল অর্জনে গর্ববোধ করে থাকেন। এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা পালন করে বীরত্বের ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও দেশের যেকোনো দুর্দিনে দেশের পাশে থেকে সকল সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে থাকেন। তাইতো স্বদেশের প্রতি তাদের অগাধ ভালোবাসা রয়ে যায়। স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা থাকায় অনেকেই তাঁর জীবনকে দেশের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছে। 

স্বদেশ প্রেম শিক্ষা

একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত স্বদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ফলে স্বদেশের প্রতি কল্যাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করার মনোবৃত্তি গড়ে ওঠে। স্বদেশ প্রেম কে আরো বেশি প্রকাশ করার জন্য স্বদেশের সম্বন্ধে বেশি বেশি জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এছাড়াও সুদিন ও দুদিনের সময় দেশের পাশে সর্বদা থাকতে হবে। দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসতে হবে। তাহলেই স্বদেশ প্রেমের মহৎ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া সম্ভব হবে। 

দেশ প্রেমের উপায়

ইসলাম ধর্মে ঘোষিত রয়েছে যে স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ। স্বদেশ কে বেশি বেশি করে ভালবাসতে হবে এবং তার প্রতি সর্বদাই অনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের স্বদেশ নিজ সন্তান হিসেবে লালিত-পালিত করে থাকেন এবং সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি থেকে রক্ষা করে থাকেন।

বিশ্বের কোন ধর্ম নেই যে যেখানে স্বদেশপ্রেমের প্রতি ভালোবাসার কথা উল্লেখ করা হয়নি। কোন ব্যক্তি শুধু দেশে থেকেই যে স্বদেশপ্রেমের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করবে তা নয়। দেশের বাহিরে থেকেও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা মমত্ববোধ প্রকাশ করতে পারেন এবং দেশের জন্য কাজ করতে পারেন। 

উপসংহার

মানব জীবনের একটি সুষ্ঠু গুণ হচ্ছে স্বদেশ প্রেম। মানবপ্রেম থেকেই সৃষ্টি হয় স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত ব্যক্তি স্বার্থ পরিত্যাগ করে দেশপ্রেমের দুটি উদ্বৃত্ত হওয়া। নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মাধ্যমে স্বদেশের প্রতি সর্বদাই অনুগত্য প্রকাশ করা।

আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন স্বদেশ প্রেম অনুচ্ছেদ ও রচনা কিভাবে লিখবেন সে সর্ম্পকে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে সামাজিক মাধ্যম গুলোতে শেয়ার করায় মাধ্যমে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন।

 এছাড়াও আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করার মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট গুলো আমাদের নিত্য নতুন আর্টিকেল লিখে অনুপ্রেরণা যোগায়। শিক্ষামূলক নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment