বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা ২০ পয়েন্ট

হ্যালো বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা ২০ পয়েন্ট নিয়ে। আপনাদের সামনে বাংলাদেশের  পোশাক শিল্প রচনাটি এমন ভাবে উপস্থাপন করেছি যে আপনারা তা মুখস্থ বা ধারনা নিয়ে রচনা পরিক্ষায় লিখে ভালো মার্ক ক্যারি করতে পারবেন। 

ভূমিকা

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে পোশাক শিল্প হচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এর একমাত্র মাধ্যম। যদিও পূর্ণাঙ্গ ভাবে শিল্পের বিকাশ ঘটেনি কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্যের মধ্যে প্রধান ও প্রথম স্থান দখল করে রয়েছেন পোশাক শিল্প। শুধু বিশ্ববাজারে পোশাক শিল্পের রপ্তানি নয়। সেই সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা ২০ পয়েন্ট

পোশাক শিল্পের যাত্রা

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৭৬-৭৭ অর্থ বছরে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ৮০ দশকের পোশাক শিল্পের জন্য স্বর্ণযুগ বলা হয়। সে সময় পোশাক শিল্প গুলো বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো গড়ে উঠেছিল। ১৯৯৩ সালে বেসরকারি ভাবে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫০ টি। কিন্তু বর্তমানে পোশাক শিল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ০৫ হাজারেরও বেশি। এই পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে ৪০ লাখেরও বেশী লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা

যদিও বাংলাদেশকে পোশাক শিল্পের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ধরা হয়। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এছাড়াও পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে করে বিশ্ববাজারে অন্যান্য দেশ গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হয়। সেজন্য পোশাক শিল্পের মান উন্নয়ন এবং উন্নত মানের পোশাক তৈরি করতে হবে।

বেকারত্বের সমস্যা সমাধান

পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো গড়ে ওঠার ফলে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ হাজারেরও বেশি গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি অপরদিকে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখের অধিক রয়েছে। একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়ছে অপরদিকে বিশ্ব বাজারে তা রপ্তানি করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।

পরিবহন ব্যবস্থা

পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার ফলে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হচ্ছে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কাঁচামাল গুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবহন গুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে অনেকেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। 

বন্দর ব্যবস্থা

পোশাক শিল্পকে বহির্বিশ্বে রপ্তানি করার জন্য বন্দর গুলোর ব্যবহার করা হয়। এবং পোশাক শিল্পের কাঁচামাল গুলো আমদানী ও রপ্তানী করার জন্য বন্দর এর প্রয়োজন পড়ে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা পাশাপাশি দেশীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। 

প্যাকেজিং শিল্পের প্রসার

পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে পোশাক গুলো প্যাকেজিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। যেমন গামটেপ, জিপার, বুতাম অন্যান্য রকম শিল্প সামগ্রী প্রয়োজন পড়ে। এগুলো সামগ্রী আমদানি করতে হয় ফলে প্যাকেজিং শিল্পের প্রসার ঘটে। 

ব্যাংক ও বীমা

 এই শিল্প গুলো গড়ে ওঠার ফলে ব্যাংক গুলো লাভবান হচ্ছে। এছাড়াও বীমা কোম্পানি গুলো প্রিমিয়ামের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। 

 নতুন প্রযুক্তির আগমন 

পোশাক শিল্প গুলো গড়ে ওঠার ফলে দেশে নতুন নতুন প্রযুক্তির যন্ত্র গুলো ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের উন্নয়ন ও মান বেড়ে যাচ্ছে। এবং দেশে উন্নয়ন সার্ধিত হচ্ছে। 

বিশ্ববাজারে পোশাক শিল্প

পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ক্রয় করে থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প গুলো ক্রয় করে। এছাড়াও ইউরোপ, কানাডা মত আরো ১২০ টির বেশি দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প গুলো ক্রয় করেন। পোশাক শিল্পের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার ফলে বিশ্ব বাজারে অনেক বড় অবদান রাখছে। 

আরোও দেখুন>

বাংলাদেশ পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়

৮০ দশকের পর থেকে পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। বাংলাদেশ পোশাক শিল্প রপ্তানির মাধ্যমে প্রতি বছর এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকেন। ২০১০,১১,১২ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয়ের হলো ৮৪৩২৯৬০৩৬১৯৯ মার্কিন ডলার। 

রপ্তানি বাণিজ্য

বর্তমানে বাংলাদেশের আয়ের ৭৬% পোশাক রপ্তানি থেকে আসে। এছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাত টি হল পোশাক শিল্প। এই শিল্প মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হচ্ছে।

পোশাক শিল্পের সমস্যা 

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার পোশাক শিল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে না, ফলে আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। 

শ্রমিকের নিরাপত্তা অভাব

পোশাক শিল্প গার্মেন্ট গুলোর পরও একটি সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা আইনের অভাব। যার ফলে অনেক শ্রমিক আগুন ও ভবন ধসের কারণে আহত ও নিহত হচ্ছে এছাড়াও শ্রমিকদের সঠিক সময়ে মজুরি প্রদান করা হচ্ছে না।

কাঁচামালের অভাব

যেকোনো ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামালের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামাল না থাকায় পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো অনেক বড় হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। ফলে বহির্বিশ্ব থেকে কাঁচামাল গুলো আমদানি করতে হয়। 

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট

যেকোনো ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পূর্বে সে স্থানের গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখতে হয়। বিদ্যুৎ ও গ্যাস হচ্ছে কাঁচামালের প্রধান উৎস। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ না থাকায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। 

পোশাক শিল্পের সমস্যা দূর করণ

পোশাক শিল্পের সমস্যা গুলো একমাত্র সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে যদি সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে তাহলে সমস্যা গুলো থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। যেমন- অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন, পশ্চাতে শিল্পের প্রসার ঘটানো, গুণা গুণের উৎকর্ষ সাধন করা, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করার আইন তৈরি করা ইত্যাদি। 

শ্রমিকের নিরাপত্তা

প্রতিটি পোশাক শিল্পে প্রতিষ্ঠান গুলোকে সবার প্রথমে নজরদারি করতে হবে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার দিকে। যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ অথবা যে সকল পোশাক শিল্প স্থাপন ভবন অনুমোদনহীন বাকি রয়েছে। সে গুলো পরিত্যাগ করতে হবে। এছাড়াও পোশাক কারখানা গুলোতে জরুরি বহির্গমনের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং মজুরদের ন্যায্য অর্থ প্রদান করতে হবে। 

পোশাকের মান উন্নয়ন

বহি বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাকের বিপুল চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্প তা প্রস্তুত করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে ১১৫ রকম পোশাকের চাহিদা থাকলেও কিন্তু বাংলাদেশে শুধু ৩৬ রকমের পোশাক তৈরী করতে পারে। পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক মান উন্নয়ন করতে হলে বেশি দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ প্রদান করতে হবে। 

উপসংহার

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় একটি অবদান রাখছে পোশাক শিল্প। শুধু বিশ্ববাজার এই নয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পোশাক শিল্পের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে হাজারো প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েক লক্ষ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং পোশাক শিল্পের মান উন্নয়ন করতে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং শ্রমিকদের সকল প্রকার নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে ও সচেতন হতে হবে যাতে করে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল গুলো সরবরাহ করতে পারে সেদিকে নজরদারি রাখতে হবে। 

আপনারা যদি আমাদের আর্টিকেলে থাকা পয়েন্ট গুলো পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারেন তাহলে পূর্ণাঙ্গ মার্কস ক্যারি করতে পারবেন। 

আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে সামাজিক মাধ্যম গুলোতে শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করার মাধ্যমে জানিয়ে দিন।

 শিক্ষামূলক নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি সেভ অথবা বুকমার্ক করে রাখুন ধন্যবাদ। 

Leave a Comment