ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে ডিজিটাল বিপ্লবের যাত্রা শুরু হয়। ইন্টারনেট আবিষ্কার হয় ১৯৬৯ সালে যার ফলে ডিজিটাল বিপ্লবের যাত্রা শুরু হয় সে সময়ে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশ্বের উন্নয়ন সাধিত হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটালাইজের গুরুত্ব গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। 

রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তিনি কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিকল্পিত কার্যক্রমে বাস্তবায়ন করেন। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা সম্পর্কে।  আর্টিকেলটি সম্পর্কে জানতে শেষ অব্দি পড়ুন। 

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যবহার উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে গণ্য করা হয়। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রধান নিয়ামক হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে ডিজিটালাইজ। স্বাধীনতা লাভের পর পর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়। তদ্রুপ বিশ্বের অন্যান্য প্রগতিশীল দেশের মত বাংলাদেশেও সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাই ২০২১ সালকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

বাংলাদেশ হলো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ এদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ ও তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। যার ফলে বাংলাদেশে একটি ডিজিটাল দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতি শ্রুতি বাস্তবায়নের সঙ্গে সংকল্প বদ্ধ।

 ডিজিটাল বাংলাদেশ কি 

 বাংলাদেশের কর্মকাণ্ডকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা কে ডিজিটালাইজ বলে। সাধারণভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। ডিজিটাইজেশন এর মাধ্যমে দেশের কর্মকাণ্ড সরকার, বাণিজ্য, শিক্ষা ও কৃষি ইত্যাদি ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। আর সেই মাধ্যম দিয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে। 

২০২১ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবেন।  ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য হল বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় কোন ব্যক্তি অশিক্ষিত থাকবেনা সকলে কম্পিউটার শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হল যাতে করে বাংলাদেশের জনগন সবক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে। 

বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি

এশিয়ার ক্ষুদ্রতম এই দেশটির জনসংখ্যা ১৫ কোটির উপরে। কিন্তু বিপুল পরিমাণে সম্পদ না থাকার ফলে জনগণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জন শক্তি ও তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল ও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে সকল ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। 

ফলে বাংলাদেশের মানুষ পরিপূর্ণ ভাবে এই প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়েছে। যে সকল রাষ্ট্র উন্নয়ন সাধন করেছে তার উন্নয়ন সাধন করার পিছনে তথ্য ও প্রযুক্তির অবদান রয়েছে। তাই কোন রাষ্ট্রকে উন্নত ও উন্নয়নশীল করতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা

২০২১ সালকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ফলে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশকে সঙ্কটের আবর্তনের অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করতে এবং উন্নত ও সমৃদ্ধশীল রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ সরকার ২০৪০ সাল নাগাদ এমন একটি রাষ্ট্র গড়তে চায় যেখানে সম্ভাব্য উচ্চতম প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে। 

আরোও দেখুন>

 এছাড়াও অর্থনীতিতে দারিদ্র বিমোচন ঘুচিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবেন।  ফলে বাংলাদেশের দায়িত্বরতা বিমোচন হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলে সকলেই সকল প্রকার অধিকার গ্রহণ করতে পারবে যেমন সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর অধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার ইত্যাদি। ফলে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে। 

বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজ করার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব কিছুকেই কম্পিউটারাইজ করা সম্ভব। তাই বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কে বেশি করে প্রধান্য দিতে হবে।

ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা

আগেকার দিনে চিকিৎসা জন্য কোন ডাক্তারকে দেখাতে হলে সুবিশাল লাইন বা  দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার মাধ্যমে সেবা নিতে হত। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলে এখন ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা যায়। ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে যে কেউ স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারে। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী সহ সকল বাহিনীর ক্ষেত্রে ডিজিটাল অস্ত্র ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও সকল বাহিনীকে ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা করার প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। এছাড়াও সাইবার অপরাধ সহ অনলাইন ভিত্তিক সকল প্রকার অপরাধের বিষয়ে প্রতিটি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। যার ফলে সকল প্রকার অপরাধীদের সহজে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। প্রতিটি ব্যক্তির অনলাইনের প্রাইভেসি রক্ষা নিশ্চয়তার  বিধান করতে হবে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

ডিজিটাল পরিবহন ব্যবস্থা

আজ থেকে কয়েক বছর আগে যাতায়াত ব্যবস্থা কতটা উন্নত ছিল না। কিন্তু ডিজিটাল হওয়ার ফলে সকল ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়েছে। আগেকার দিনে কোথাও যেতে হলে লম্বা লাইন ধরে বা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার ফলে টিকিট সংগ্রহ করতে হতো। ফলে মানুষ অনেক হয়রানির সম্মুখীন হতো। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলে ঘরে বসেই যেকোনো ধরনের টিকিট সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। এখন চাইলে ঘরে বসে থেকেই ট্রেন বা বিমানের টিকিট ও বাসের টিকিট সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশের কতিপয় লক্ষ্য মাত্রা

সরকার ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য মাত্রা ধার্য করেছেন। তাই বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে বিভিন্ন উপায় ধাপে ধাপে কাজ করে যাচ্ছেন। যেমন-

১। প্রার্থমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভর্তির হার ১০০% হবে। 

২। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হবে। 

৩। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে।

৪। স্বাস্থ্য সম্মত সেনেটারী লেপটিন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। 

৫। নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

৬। ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব তার হার ১০ শতাংশের নীচে নিয়ে আসা হবে। 

৭। কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ পদ্ধতি ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি গ্রহন করা হবে।

৮। বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড করার জন্য কম্পিউটার নির্ভরশীল একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ডিজিটাল অনলাইন সুবিধা সমূহ

বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজিটাল হওয়ার ফলে নিত্যদিন সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা অনলাইনের মাধ্যমে ভোগ করা সম্ভব হচ্ছে । এখনকার দিনে যে কেউ চাইলেই তার রুমে বসে থেকে অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো জিনিস ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারেন। এছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার কাজ-কর্ম করে থাকেন।

ডিজিটাল হওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই বদলে গেছে সবকিছু এখন হাতের কাছেই চলে এসেছে। স্বাস্থ্য খাত থেকে শুরু করে শিক্ষা, কৃষি ও অর্থনীতি সকল কিছুর উন্নয়ন সাধন করেছে তথ্য-ও-যোগাযোগ-প্রযুক্তি। এখন যে কেউ চাইলেই অনলাইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহন করতে পারেন। এছাড়াও রুমে বসে থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস করতে পারে এবং তা চাইলে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এই সকল কিছুই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদান।

উপসংহার

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে বর্তমান সরকার ইতিমধ্যেই অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। বিভিন্ন পদক্ষেপ গুলো বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে তা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে সরকার যে সকল কাজ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা রূপান্তরমূলক। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের তথ্য প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এর ফলে দেশ উন্নয়নশীল ও আধুনিক কতার স্বর্ণযুগে পৌঁছানো সম্ভব হবে। 

আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন । আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে সামাজিক মাধ্যম গুলোতে শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন। এছাড়া শিক্ষামূলক নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। 

Leave a Comment