বিকশিত বাঙালি জাতীয়তাবাদে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য কি ছিল

বাঙালি জাতি প্রায় ২০০ বছর ইংরেজ শাসন ও শোষণের পর ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ভারতবর্ষে এবং সেখান থেকেই ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আমাদের বাংলাদেশের পূর্ববাংলা হিসেবেই একসময় পরিচিত ছিল যা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববাংলা যোগ হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিভিন্ন অত্যাচার, অসামাজিক কার্যকলাপ ও ধর্ম, শিক্ষা, ভাষা নিয়ে শুরু হয় পারস্পরিক পক্ষভেদ। 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে প্রথম সফল আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতির পরিচয় ও বাংলা নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করে। 

ভাষা আন্দোলন

বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি হচ্ছে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা রক্ষায় এবং সরকারি সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রয়োগের জন্য বাঙালি জাতি যে আন্দোলন করেন তাকে ভাষা আন্দোলন বলে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি নিজের বাংলা ভাষার অধিকার আদায় করতে শেখে এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রথম সফল আন্দোলন তৈরি করেছিল।

বাঙালি জাতীয়তাবাদে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান জন্মলাভের পর থেকেই পাকিস্তানী শাসক শ্রেণীর বৈষম্যমূলক নীতি, অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং রাজনীতিতে ইসলাম ধর্মের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের শুরুতে মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পৃথক জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে আন্দোলনের দানা বাঁধতে শুরু হয়। নিচে বাঙালি জাতীয়তাবাদে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য তুলে ধরা হল। 

বাহান্নর ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারের অবহেলা-বঞ্চনায় ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল।

বাঙালি জাতির মাতৃভাষার প্রতি অবমাননা বাঙালির মধ্যে আঘাত দিয়েছিল তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানীদের হাতে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য কোন কিছুই নিরাপদ নয়।  এভাবেই বাঙালি জাতির মাঝে জাতীয়তাবাদের প্রথম সুচনা সৃষ্টি হয়েছিল। 

পূর্ববাংলা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূচনা

ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ববাংলা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূচনা সৃষ্টি হয়। ভাষা আন্দোলনের সময় পার্লামেন্টের মধ্যে দুই দলীয় সমর্থকদের মধ্যে রাজপথে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল।  ফলে পূর্ব বাংলায় হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি ও দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়ে যায়।

বাঙালি জাতির মাতৃভাষা আন্দোলনে ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক-কৃষক, কর্মজীবী পুরুষদের সকল পেশার লোকের মধ্যে  ঐক্যতা  সৃষ্টি হয় এবং ভাষা আন্দোলনের সময় তাদের কিছু দাবি তুলে ধরে। যেমন, আন্দোলনের সময় কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদে বাঙালি জাতির সংখ্যানুপাতিক আসনসংখ্যা, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবি, কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে বাঙ্গালীদের অধিকাংশ পদে নিয়োগ, এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটানোর দাবি তুলে ধরা হয়। 

তৎকালীন ছাত্র সমাজ সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং তারা নিজের মাতৃভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করেছিল যা পরবর্তীতে সমস্ত বাঙালি জাতিকে একত্রিত করেছিল। 

আরো দেখুন>>>

৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বাঙালি জাতির প্রথম জয়লাভ, তারা বাংলা ভাষাকে নিজের করে এবং রাষ্ট্রীয় সকল কাজে ব্যবহার করার সক্ষমতা লাভ করে। বাংলা ভাষার জন্য বাঙালি জাতির এ আন্দোলন ইতিহাসের পাতায় বাঙালি জাতির অনুপ্ররনা। 

Leave a Comment