উগ্র জাতীয়তাবাদ কে ‘সভ্যতার শত্রু’ বলেছেন কে?

আমাদের অতীত ঐতিহ্যের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রগঠন, ধর্ম ও প্রচলিত রীতিনীতি ইত্যাদি নিয়ে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠে। কিন্তু যখন আমরা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রচলিত নিয়ম কানুন ইত্যাদি ছেড়ে অন্য কোন জনগোষ্ঠী বা জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ফলো করি। তখন আমাদের জাতীয়তাবাদ ধ্বংসের দিকে চলে যায়। আর একারণেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন উগ্র জাতীয়তাবাদ কে ‘সভ্যতার শত্রু’ বলেছেন। 

জাতীয়তাবাদ কি 

সাধারণত জাতীয়তাবাদ কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বুদ্ধিমত্তা তথা নিজস্ব জাতিসত্তাকে বোঝায়। জাতীয়তাবাদ সকল মানুষ ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ, নিজস্ব আত্মপরিচয়, রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিক্ষা সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করে। জাতীয়বাদ কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর জাতির অনুভূতিমূলক একটি মানসিক ধারণা। 

জাতীয়তাবাদ হল এমন একটি রাজনৈতিক অভিমত যার দ্বারা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের জীবন ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বুদ্ধিমত্তা ও ভাষাগত বসবাসরত অধিবাসীদের বোঝানো হয়েছে। 

উগ্র জাতীয়তাবাদকে ‘সভ্যতার শত্রু’ বলার কারন 

উগ্র জাতীয়তাবাদকে মানবসভ্যতার শত্রু বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জাতীয়তাবাদ নিয়ে তাঁর এমন মন্তব্যের পিছনে বেশ কিছু কারন উল্লেখযোগ্য। যেমন,

১. ভৌগোলিক ঐক্য নষ্টঃ আমরা যদি আমাদের নিজের নিজস্ব ভূখণ্ডের মাঝে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতিনীতি আয়ত্ত করি। তবে সে ক্ষেত্রে একই ভূখণ্ডের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি হয় যার কারণে  ভৌগলিক  ঐক্যতা নষ্ট হয়। 

২. বংশগত ঐক্যতা নষ্টঃ আমাদের পূর্বপুরুষদের চলিত রীতি নীতি সংস্কৃতি থেকে আমরা সময়ের সাথে সাথে ওই সকল রীতিনীতি থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখার চেষ্টা করি। যার কারণে আমাদের বংশগত রীতিনীতি গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

৩. ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্যতা ধ্বংসঃ প্রত্যেক জাতি বা গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন উৎসব প্রাচীনকাল থেকেই পালন করা হয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা আমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক উৎসব থেকে বঞ্চিত হয়। অন্য কোন জাতি বা গোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

৪. ধর্মীয় গোঁড়ামি সৃষ্টিঃ আধুনিক সভ্যতার যুগে মানব সভ্যতা বিশিষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ধর্মীয় গোঁড়ামি। আমরা আমাদের ধর্মীয় দিকগুলো নিয়ে অন্য কোন জাতিগোষ্ঠীর সাথে তুলনামূলক পার্থক্য তৈরি করি। যার ফলে আমাদের নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বৈরতা দেখা দেয়। 

৫. রাজনৈতিক ঐক্যতা নষ্টঃ যখন কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে এক বা একাধিক রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রচলিত রীতি নীতি নিয়ে জনসমাজের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। তখন ওই ওই তখন ঐ ভূখণ্ডে রাজনৈতিক রাজনৈতিক ঐক্যতা নষ্ট হয়ে যায়। 

আধুনিক মধ্যে সভ্যতার যুগে আমাদের সমাজের মাঝে উপরোক্ত উল্লেখযোগ্য কারণ সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উগ্র জাতীয়তাবাদকে মানব সভ্যতার শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

আরো দেখুন>>>

আশাকরি আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি উগ্র জাতীয়তাবাদকে মানব সভ্যতার শত্রু বলার কারণ এবং কে বলেছেন এই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা সঙ্গে করতে পেরেছেন। 

Leave a Comment