পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটির সভাপতি কে ছিলেন?

পূর্ববাংলা জনগণের মাতৃভাষা এবং বাংলা ভাষাকে সরকারি বেসরকারি সকল দপ্তরে তার পূর্ণ মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। পূর্ব-পাকিস্তানের তৎকালীন নেতা ও জনগণকে নিয়ে ১৯৪৯ সালের ৯ই মার্চ পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি (East Bengal Language Committee) নামের একটি নতুন কমিটি প্রতিষ্ঠা করে। পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি সভাপতি ছিলেন মাওলানা মুহম্মদ আকরম খাঁ। 

১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। যার কারণে বাংলাদেশের নাম করা হয় পূর্ব পাকিস্তান।  কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পাকিস্তান সরকার পূর্ব-পাকিস্তানের অসহায় মানুষদের মাতৃভাষা ও বিভিন্ন সরকারি কার্যকলাপ ক্ষেত্রে বিভিন্ন অন্যায় ও নির্যাতন চালিয়ে যায়। 

পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটির শর্ত 

বাঙালি জনগণের মাতৃভাষাকে সংস্কার, সহজীকরণ ও প্রমিতকরণের বিষয়ে তৎকালীন বাঙালি নেতারা পাকিস্তান সরকারের নিকট প্রস্তাব পেশ করলেও তারা বাঙালি জাতির প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এ বিষয়টি তৎকালীন পূর্ব বাংলার নেতাদের মোটেও পছন্দ হয়নি। তারা বুঝতে পেরেছিলো যে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। আপনারা তাই ১৯৪৯  সালের ৯ই. মার্চ পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। 

পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটির প্রধান শর্ত গুলো তুলে ধরা হল। 

১. বাঙালি জাতির ভাষা সহজকরণ, সংস্কার, বিকাশ ও প্রমিতকরণ এ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা হয়। 

২. যেসব বিদেশি শব্দের পরিভাষা বাংলা ভাষায় নেই। সেসব শব্দের জন্য নতুন নিয়মাদর্শ ও পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন শব্দ ও  ফ্রেজ গঠন এবং কিভাবে অনুবাদ করা যায়। 

৩.  কিভাবে বাংলা ভাষাকে পাকিস্থান ও বাঙালি জাতির সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায়, সে বিষয়ে কমিটি পরামর্শ প্রদান।

পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি

 ১৯৪৯ সালের ৯ই মার্চ পূর্ববাংলা জনগণের মাতৃভাষা এবং বাংলা ভাষাকে সরকারি বেসরকারি সকল দপ্তরে তার পূর্ণ মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ১৬ সদস্যের পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি (East Bengal Language Committee) গঠন করা হয়। পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি সভাপতি ছিলেন মাওলানা মুহম্মদ আকরম খাঁ ও কবি গোলাম মুস্তফাকে সদস্যসচিব করা হয়।

পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটির দায়িত্বে যারা ছিলেন, হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী (প্রাদেশিক মন্ত্রী),  ডক্টর এ এম মালিক (প্রাদেশিক মন্ত্রী),  ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন (উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়),  মৌলানা আব্দুল্লাহ আল-বাকী (এমএলএ), ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (অধ্যক্ষ, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), আবুল কালাম শামসুদ্দীন (এমএলএ, সম্পাদক: দৈনিক আজাদ), সৈয়দ আবুল হাসনাত মুহম্মদ ইসমাইল (ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, পূর্ববাংলা সরকার, ঢাকা), মীজানুর রহমান (ডেপুটি সেক্রেটারি, শিক্ষা বিভাগ, পূর্ববাংলা সরকার, এমাজউদ্দিন আহম্মদ (প্রাক্তন অধ্যক্ষ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট), শাইখ শরাফুদ্দীন (অধ্যক্ষ, ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ), এ কিউ এম আদমউদ্দিন (অধ্যাপক, ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ, নওগাঁ, রাজশাহী),  মৌলভী জুলফিকার আলী (স্বত্ত্বাধিকারী, আলাবিয়া প্রেস, চট্টগ্রাম), গণেশচন্দ্রবসু (অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং মোহিনী মোহন দাস গোলাম মুস্তফা, হেড মাস্টার, সেক্রেটারি। 

আশাকরি আপনারা এই পোস্টের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি, কমিটির শর্ত ও কমিটির সভাপতি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য সংগ্রহ করেছেন। 

আরো দেখুন>>>

আমাদের এই পোস্টটি আপনার কাছে ভাল লেগে থাকলে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করে, অন্যকে তথ্যগুলো সুযোগ্য পড়ার সুযোগ করে দিন। 

Leave a Comment