চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রচনা

আজ আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রচনা নিয়ে। আপনাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রচনাটি এমন ভাবে উপস্থাপন করেছি যে আপনারা তা মুখস্থ বা ধারনা নিয়ে রচনাটি পরিক্ষায় লিখতে পারবেন। 

ভূমিকা

পৃথিবীতে চার বার শিল্প বিপ্লব ঘটেছে ফলে শিল্পের মান ও উন্নয়ন সাধন হয়েছে। শিল্প বিপ্লব চার বার ঘটলেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জনক বলা হয় ক্লাউস সেয়াব নামক ব্যক্তি কে। এই ব্যক্তিটি ছিলেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চেয়ারম্যান। তিনি তার লেখায় দা ফোর্থ ইন্দুষ্ট্রিয়াল রিভলিউশন নামক একটি বইয়ে বিষয় গুলো বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেন। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রচনা

যদিও প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লব গুলো কেন্দ্র করে উঠেছিলো কর্ষি, প্রাণী, শক্তি, রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল প্রযুক্তি ব্যবহার, দক্ষতা, চিন্তাশক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে।

চার শিল্প বিপ্লব

 প্রথম শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিন উৎপাদন শিল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে। এই বিপ্লব ঘটেছিল ১৭৮৪ সালে। এই বিপ্লবের ফলে বাষ্পীয় ইঞ্জিন উৎপাদন সম্প্রসারণ ঘটে।

দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল ১৮৭০ সালে। এই শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে বিদ্যুতের আবিষ্কার ঘটে। ফলে বিদ্যুতের উদ্ভাবন ও ব্যবহার সাধিত হয়। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে বিদ্যুতের আবিষ্কার হওয়ার ফলে বিশ্ব উন্নতি ও উন্নয়নশীল এবং প্রযুক্তিগত দিক গুলো ব্যবহার করতে পারছে। 

তৃতীয় শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল ১৯৬৯ সালে। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের ফলে ইন্টারনেটের আবিষ্কার হয়েছিল। যা বর্তমানে ইন্টারনেট ছাড়া কোন কিছু কল্পনা করা দুষ্কর। ইন্টারনেটের কারনে বর্তমানে আমরা হাতের কাছে পুরো বিশ্বকে রাখতে পারি।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মূলত ঘটেছিল ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব নিয়ে। এই শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত ব্যবহার, প্রযুক্তির দক্ষতা এবং চিন্তাশক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিপ্লব ঘটেছিল। এ বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মান উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রা বেড়েছে। ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে বর্তমানে এখন যেকোনো ধরনের কাজ নিমিষেই করা সম্ভব হচ্ছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ইতিবাচক প্রভাব

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে নিত্য নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে। ফলে আগেকার দিনে বাজারে যেগুলো অউন্নত মানের প্রযুক্তি ছিল তা ক্রমান্বয়ে উন্নত প্রযুক্তিতে ক্রমান্বয়ে ঘটেছে। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষের জ্ঞান অর্জনের নিয়মটাই পরিবর্তন করে দিয়েছে। জ্ঞান অর্জনের পাশা-পাশি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের সকল প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য পুস্তক গুলোতে পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। পূর্ব পুঁথিগত বিদ্যার সে বর্তমানে বাস্তব বিজ্ঞান ও দক্ষতার চাহিদা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যাচ্ছে।

এই বিপ্লবের ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবার কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । সামাজিক মাধ্যম গুলোর মধ্যে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি বহুল ব্যবহৃত একটি সামাজিক ওয়েবসাইট।  এছাড়াও অন্যান্য মাধ্যম রয়েছে যেমন টুইটার , ইউটিউব। এগুলোর ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ক্রমান্বয়ে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ফলে জনসাধারণ অনলাইন কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। 

আরোও দেখুন>>>

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বড় একটি প্রভাব দেখা যায় মেডিকেল সাইন্স বিভাগ গুলোতে। মেডিকেল গুলোতে বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে জটিল জটিল রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে। যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি অনুদান। 

এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্র রয়েছে এ বিপ্লবের অবদান অধিক রয়েছে। এ বিপ্লবের ফলে নিত্য নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রপাতি ও নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন এবং গবেষণা চালানোর জন্য ব্যবহার করার মাধ্যমে অনেক সফলতা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।  এছাড়াও প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসলের মান উন্নয়ন এবং উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতিবাচক প্রভাব

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষ অনেকটা অলসতা রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে মানুষ এতটাই অলস হয়ে গেছে যে যোগ-বিয়োগ অথবা গুণ করতেও মোবাইল বা কম্পিউটারে বসে ক্যালকুলেশন করে থাকে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অর্থাৎ ডিজিটাল বিপ্লব মানুষকে ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে গ্রাস করে নিয়েছে। ফলে ভার্চুয়াল জগতের কর্মকাণ্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভার্চুয়াল জগত সৃষ্টি হওয়ার ফলে মানুষ এখন একাকীত্ব উপভোগ করতে ভালোবাসে। কেউ আর আগের মতো সবাই সঙ্গে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করেন না।

অনেক গবেষক বলেছেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে অর্থাত এই ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে পৃথিবী একসময় হুমকির সম্মুখীন হবেন। কারণ ভার্চুয়াল জগতে যেমন চাকরি তৈরি হবে তদ্রূপ নিরাপত্তা-ঝুঁকিতে অধিক। বায়োটেকনোলজি,প্রোগ্রামিং,রোবটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে অর্থনৈতিক কাজ ব্যবহার বাড়বে এবং সেই সঙ্গে ধ্বংসাত্মক ও ব্যয় বহুলও বেড়ে যাবে। 

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজ গুলো সম্পন্ন করছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এরূপ কর্মকাণ্ডের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন অভিবাসন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

 বাংলাদেশের ভৌগোলিক কারণ এর কারণে এছাড়াও অর্থনৈতিক কারণে যে কোন ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া অনেক দেরিতে পৌঁছয়। তদ্রূপ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও উন্নয়নের ছোঁয়া পুরো বিশ্বতে লেগেছে তা বাংলাদেশের কাছে অনেক দেরিতে পৌঁছায়। 

ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশের কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক ভাবে অনেকটা উন্নত করেছে। বাংলাদেশের বড় বড় কল কারখানা গুলোতে আগে কার দিনে অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হতো অথবা অধিক সময়ের কারণে অনেক কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে তা নিমিষেই করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে কাজের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে অপরদিকে কায়িক শ্রমিকদের বেকারত্বের হার বেড়েই  যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ গন এখন অনলাইন ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে অলস ও মেধা শক্তি দিন দিন হ্রাস পেতে শুরু করেছে।

জনগণকে প্রযুক্তি ও আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবং কারিগরি শিক্ষা জন্য বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এর ফলে বেকারত্বের হার কমবে এবং দেশ ও জাতির উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের চাহিদা ও প্রযুক্তি ভিত্তিক মানব সম্পদ গড়ে তুলতে দেশের সকল শ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার কোর্স চালু করতে হবে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হবে এবং আর্থিক খাতকে উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। 

অপরদিকে সাইবার নিরাপত্তা প্রদানের জন্য তৈরি করতে হবে। উন্নত মানের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষার দিকে জনগণকে অধিক মনোযোগ পোষণ করতে হবে।

উপসংহার

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে যেমন বিশ্বে প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অপরদিকে মানুষকে করেছে অলস এবং জ্ঞান হীন। এই বিপ্লব কে কাজে লাগিয়ে অনেক রাষ্ট্র উন্নতশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এই বিপ্লবের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোতে বেশি উন্নতি সাধিত হয়েছে।

ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে এখন মানুষ ঘরে বসেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যেতে পারে। এবং যেকোন প্রান্তের খবরা-খবর নিমিষেই নিতে পারে। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের মান উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে।

আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে সামাজিক মাধ্যম গুলোতে শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারে। এছাড়া নিত্যনতুন শিক্ষামূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুকমার্ক করে রাখতে পারেন। 

Leave a Comment