নার্সারি কাকে বলে? চারাগাছ তৈরী করতে কি কি প্রয়োজন হয়?

আপনারা যারা নার্সারি করতে চাচ্ছেন কিন্তু চারাগাছ তৈরি করতে কি কি প্রয়োজন হয় সে সম্পর্কে জানেন না। এই আর্টিকেল মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিবো চারাগাছ তৈরি করতে কি কি প্রয়োজন হয়ে থাকে তাই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

আমারা সাধারনত ভাবে বলতে পারি যে নানান ধরনের চারা গাছ উৎপাদন করার লক্ষে বা বিক্রয় করার জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশেষ স্থানকে নার্সারি বলা হয়। নার্সারি তে প্রথমে বীজতলা তৈরি করা হয় এরপর চারা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তা বিক্রয় বা অন্য স্থানে রোপণ করা হয়।

নার্সারি কাকে বলে? 

যে স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উদ্ভিদের কলম বা ছোট তারা উৎপাদন করা হয় ও রোপণ করার পূর্ব পর্যন্ত যত্ন সহকারে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে তাকেঅনার্সারি বলে।

আধুনিক কৃষিতে নার্সারি গুরুপ্ত অপরিসীম। নার্সারি ছাড়া কৃষি অসম্পূর্ণতায় রয়ে যায়। নার্সারি প্রধান কাজ হচ্ছে উদ্ভিদের কলম বা ছোট তারা উৎপাদন করে তা যত্ন সহকারে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। চারা গাছ প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত নার্সারিতে রাখা হয়ে থাকে তা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে অন্য স্থানে রোপণ করা হয়।

নার্সারি অর্থনৈতিকে গুরুত্ব অপরিসীম ছোট ছোট নার্সারি গুলো থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হয়। নার্সারিতে অল্প জায়গায় অধিক চারা গাছ  উৎপাদন করা সম্ভব হয় যার ফলে চারাগাছ ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে বিক্রয় করার উপযোগী হয়ে উঠে। আগাম কিছু চারাগাছ উৎপাদন করলে ভালো লাভবান হওয়া সম্ভব হয়।

চারাগাছ তৈরী করতে কি কি প্রয়োজন হয়?

বীজতলা তৈরি করতে হলে পূর্বে জেনে নিতে হবে চারাগাছ জন্য কি কি উপাদান প্রয়োজন হয়ে থাকে কারণ বীজ কে পরিচর্যার মাধ্যমে রোপণ করার জন্য উপযুক্ত করে তুলতে হয়। 

চারাগাছ তৈরি করতে হলে যে সকল বিষয় উপর খেয়াল রাখতে হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হল-

  • বীজ তলার জন্য জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
  • কত বড় জায়গা জুড়ে বীজতলা তৈরি করবেন তা নির্বাচন করতে হবে।
  • মাটি শোধন কিভাবে করতে হবে।
  • বীজ তলার কিভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
  • বীজ তলার কি ধরনের সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • বীজ বপনের পূর্বে বীজ কে কিভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
  • বীজ কে কত টুকু গভীরে বপন করতে হবে।
  • বীজ কিভাবে বপন করতে হবে, সারি করে না এলোমেলো ভাবে।
  • বীজ বপনের পর পানি দিতে হবে কিনা।
  • কিভাবে বীজ তলায় মালচিং করবে।
  • কত দিন পড়ে মালচিং খুলে দিতে হবে।
  • বীজ গজানোর পর কি কি স্প্রে করতে হবে।

চলুন নিম্নে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক-

জায়গা নির্বাচন-

আপনাকে বীজ তোলার জন্য অবশ্যই ছায়া মুক্ত ও উচু স্থান নির্বাচন করতে হবে। ছায়া মুক্ত স্থানে চারা অস্বাভাবিক ও দুর্বল হবে না,মাটিতে ক্ষতিকর অনুজীবের উপস্থিতি থাকবে না। ফলে চারা গাছ রোগমুক্ত হবে, উঁচুস্থি স্থান হলে বর্ষাকালে পানি না ওঠার ফলে চারা গাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

বীজতলার আকার-

পরিচর্যার সুবিধার্থে আপনারা আদর্শ  বীজতলা তৈরি করতে পারেন। আদর্শ বীজ তলার মাপ হল ১ মিটার প্রস্থ ৩ মিটার দৈর্ঘ্য। এছাড়াও বীজের উপর নির্ভর করে আপনারা বীজ তলার মাপ বেশি বা কম করতে পারেন। 

মাটি শোধন-

বীজতলা জন্য প্রধান উপাদান হল মাটি। মাটিতে ক্ষতিকর অনুজীব থাকে তাই বীজ রোপনের পূর্বে মাটিকে সংশোধন করে নিতে হবে। সংশোধন করে নেওয়ার ফলে বীজের মান ভালো হবে এবং বীজ কোন প্রকার ক্ষতি হবে না।

বীজতলা প্রস্তুতকরন-

বীজতলার জন্য স্থান নির্বাচন করে স্থানটিকে চাষ করে নিতে হবে যাতে করে মাটি গুলো একদম ঝুরঝুরা হয়ে যায়। অনেকে মাটি গুলো চালনি দ্বারা তা ঝুকে নেন এই পদ্ধতি টি সব চেয়ে উত্তম। এতে করে মাটিতে মিশানে সকল উপাদান মিক্স হয়ে যায়।

শীতকালের জন্য বীজতলাকে একটু উঁচু করে দিতে হবে এবং বর্ষাকালের জন্য বীজ তলাতে ৮-১০ আঙ্গুল উচু করে দিতে হবে।

স্যার প্রয়োগ-  

বীজতলায় কীটনাশক স্যার কখনো প্রয়োগ করা যাবে না। বীজতলায় সব সময় জৈব স্যার প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে বীজের মান ভালো হবে বীজের স্বাস্থ্য মজমুত হবে। জৈব স্যার ১০X৩ ফিটের বীজতলার জন্য ২ থেকে ৩ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। 

বীজ প্রস্তুতি-

বীজের ভালো অংকুরদম জানানোর জন্য প্যাকেট থেকে বীজ বের করে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার তা ২০-৩০ মিনিট ছায়া স্থানে রেখে দিতে হবে। এরপর ২ লিটার পানিতে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে ভালো ভাবে শোধন করে নিতে হবে।

বীজে বপনের পর পানি দেয়া-

যদি বীজতলা ভিজে থেকে থাকে তাহলে বীজ বপন করার পড়ে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বীজ থেকে চারা বের হওয়া পর্যন্ত জো অবস্থায় রবে। যদি এর আগে পানি দিতে চান তাহলে যায়গাটি চটা বাধতে পারে এতে করে বীজ ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে যাবে।

মালচিং-

মাটি ঠাণ্ডা রাখতে এবং রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য মালচিং দেওয়া হয়ে থাকে। বীজ বপনের পর খড় বা অন্য কোন জিনিস দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়ে থাকে এরপর তার উপরে পানি ছিটা দেওয়া হয়। এতে করে মাটি গরম থাকে উপরের অংশ টি রোদে শুকাতে পারে না।

বীজ যখন বের হওয়া শুরু করে তখন মালচিং সরিয়ে ফেলা হয় যাতে করে বীজের  কোন ধরনের ক্ষতি না হয়। 

চারা স্প্রে-

 সকল চারা গাছে যখন দু পাতা গজিয়ে উটবে তখন পানিতে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম দিয়ে চারা গাছ গুলো স্প্রে করে দিতে হবে। ছোট চারা গাছ গুলো অনেক লাজুক হয়ে থাকে তাই করা কোন কিছু দিয়ে স্প্রে করা যাবে না এতে করে চারার ক্ষতি হবে। 

যদি পিঁপড়ার অত্যাচার বেশি দেখা যায় তাহলে Cypermethrin ও Chlorpyrifos হাল্কা করে দিতে হবে এতে করে পিঁপড়ার আক্রমন কমে যাবে।

আমাদের আর্টিকেল টি যদি আপনাসে কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করার মাদ্গ্যমে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন। 

Leave a Comment