পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব রচনা

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব হলো একটি রচনা। তবে এখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরিক্ষায় অনুচ্ছেদ ও প্রশ্ন হিসাবে আসে। তাই আপনাদের সামনে পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব এমন ভাবে উপস্থাপন করেছি যা আপনি মুখস্থ বা ধারনা নিয়ে রচনা টি পরিক্ষায় অনায়াসে  লিখতে পারবেন।

ভূমিকা

বাংলাদেশ হলো এশিয়া মহাদেশের একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশটি নদীমাতৃক হওয়ায় পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। আরে একটি দেশেরে উন্নয়নশীল করতে হলে সে দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হয়। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে দুটি হলো যমুনা ও মেঘনা এই নদীর উপর এই পদ্মাসেতু ব্রিজ টি নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুকে কেন্দ্র করেই স্বপ্ন দেখতেছে দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ গুলো। 

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব রচনা

পদ্মা সেতুর গুরুত্ব

বাংলাদেশ নদীমাতৃক হওয়ার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা খারাপ ছিল। ব্যবসা ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে নৌ পথে যাতায়াত করতে হতো ফলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গতিশীল করার জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়। এই সেতুটি নির্মাণ করার ফলে দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হয়। এবং সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। 

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট

দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষগুলো স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে দাবী বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। যার ফলে ১৯৯৮ সালে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কথাটি সামনে আসে, ফলে প্রথম পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। 

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ছিল যে স্থল পথে তারা বাণিজ্য করবেন এবং দুটি পাড়ের মানুষ কে সংযুক্ত করবেন। তারই ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। অর্থের যোগান না থাকায় সেতুর কাজটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু কাজ করার জন্য অর্থায়ন প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়  ২০০৭ সালে এবং নতুন করে প্রকল্পটিতে রেল সেতু সংযুক্ত করা হয়। 

প্রতিবন্ধকতা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প টি হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সময় বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রথম দিকে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করলেও তা ২০১২ সালে বাতিল ঘোষণা করেন। 

ফলে বাংলাদেশে বড় একটি হুমকির সম্মুখীন হয়ে যান। এবং প্রকল্পটির কাজ আবারো অনিশ্চিত কালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা প্রদান করেন। তারই ফলশ্রুতিতে নিজ অর্থায়নে বর্তমানের পদ্মা সেতু টি দৃশ্যমান রয়েছে। 

জাতীয় উন্নয়ন

বহির্মুখী পদ্মা সেতু একটি দেশের সার্বিকউন্নয়নে শিক্ষা ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং খেলাধুলার উন্নতি জাতীয় উন্নয়নের অংশ। পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে আসা কৃষি পণ্য গুলো অতি দ্রুত ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। 

পদ্মা সেতুর বর্ণনা

পদ্মা সেতু টির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং পদ্মা সেতুর প্রস্থ হলো ২১.১০ মিটার। সেতুটির সর্ব মোট পিলারের সংখ্যা হল ৪২ টি। পিলারগুলো নদীর ভিতরে রয়েছে (৪৪)চল্লিশটি এবং দুই পাশে রয়েছে দুটি পিলার। পদ্মা সেতুর নদীর ভেতর যে (৪৪)চল্লিশটি পিলার রয়েছে তার মধ্যে প্রতিটি পিলারে ০৬টি করে মোট ২৪০টি পাইল স্থাপন করা রয়েছে। 

আরোও দেখুন>

এছাড়াও দুই পারের দুইটি পিলারে (১২)বারোটা করে মোট (৪৪)চব্বিশটি পাইল স্থাপন করা রয়েছে। পিলার গুলোর উপরে ৪১ টি স্প্যান বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্পটির কাজ করেছেন চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়াও পদ্মাসেতু ব্রিজ টির আয়ুকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ বছর।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয়

২০০৭ সালের তৎকালীন তত্তাবোধক সরকার পদ্মা সেতুর  জন্য ১০ হাজার ১৫১ কোটি টাকার প্রকল্প টি পাস করেন । পরবর্তীতে ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর  এই প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এছাড়াও দ্বিতীয় বারের মতো পদ্মা সেতুর প্রকল্পটির ব্যয় সংশোধিত করা হয় ২০১৬ সালে পদ্মা সেতুর জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮  হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৯ সালে সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। 

ব্যাবসায়িক সুবিধা

পদ্মা সেতু টির ফলে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। সেতুটি নির্মাণের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ব্যবসায়ী অবস্থা ব্যাপক উন্নতি হবে এবং সেই সাথে অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নৌ পথে পণ্য যাতায়াত করার ফলে অনেক সময় দেখা যেত অধিক সময় লাগার কারণে তা নষ্ট হয়ে যেত কিন্তু পদ্মা সেতু জন্য তা স্থল পথ হয়ে অতি দ্রত বাজার যাত করা সম্ভব হবে। 

উৎপাদন বৃদ্ধি

পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যে বাণিজ্য শিল্প গুলো রয়েছে তার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কারণ তখন উৎপাদিত পণ্য গুলো সমগ্র দেশে পৌঁছাতে বর্তমান সময়ের চেয়েও কম সময়ে প্রয়োজন হবে ফলে ক্রেতারা সহজেই তা পেয়ে যাবে।

উপসংহার

পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে জাতীয় উন্নয়নের মূল অর্থনীতির উপর বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। পদ্মা সেতু টি হলে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে ফলে সেই সঙ্গে শিল্প বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তন দেখা দিবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটবে।

আপনারা যদি আমাদের দেওয়া পয়েন্ট গুলো পরীক্ষার খাতায় উল্লেখ করে বিস্তারিত ভাবে লিখেন তাহলে পূর্ণাঙ্গ মার কি করতে পারবেন। আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুচ্ছেদ বা রচনা আকারে আসলে কিভাবে দিবেন তার পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন। 

আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে সামাজিক মাধ্যম গুলোতে শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন। এছাড়াও আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করার মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন। 

শিক্ষামূলক নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি সেভ বা বুকমার্ক করে রাখতে পারেন। 

Leave a Comment