পোশাক শিল্প রচনা

পোশাক শিল্প কি? পোশাক শিল্প হলো একটি অনুচ্ছেদ বা রচনা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরিক্ষায় অধিকাংশ সময় পোশাক শিল্প রচনা হিসাবে আসে। তাই আপনাদের সামনে পোশাক শিল্প রচনাটি এমন ভাবে উপস্থাপন করেছি যে আপনারা তা মুখস্থ বা ধারনা নিয়ে রচনা কিংবা অনুচ্ছেদ হিসাবে পরিক্ষায় লিখে ভালো মার্ক ক্যারি করতে পারবেন। 

ভূমিকা

একটি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সে দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থা বা পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।  তদ্রূপ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অন্যান্য শিল্প তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে এবং রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হিসেবে বহুল পরিচিত। পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক বিশাল কর্মসংস্থানের বাজার। পোশাক শিল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন অর্থনীতির চালিকা শক্তি বাড়ছে অপরদিকে বাড়ছে বেকারত্বের কর্মসংস্থান।

পোশাক শিল্প রচনা

পোশাক শিল্পের যাত্রা

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৬-৭৭ অর্থ বছরে পোশাক শিল্প বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। আশির দশকে পোশাক শিল্প জন্য গার্মেন্টস শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করে। তখনকার দিনে পোশাক শিল্প গুলো বেসরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে ছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালে মাত্র ৫০ টির মত কারখানা হওয়ায় তার বিকাশ বেশি বিস্তৃত হতে পারেনি। 

প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রচেষ্টায় তা অল্প দিনের ভিতরে সব কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোর নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৮৫%। এছাড়াও পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো সম্পূর্ণ বেসরকারী ভাবে গড়ে উঠেছে।  পোশাক শিল্প খাত থেকে দেশের অর্থনীতির ও বৈদেশিক বাণিজ্যের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখছে। 

পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো কে প্রস্তুতি নিতে হবে। এছাড়াও আইএসও সনদ গ্রহণ করতে হবে যেহেতু ক্রেতারা উক্ত বিষয়টির উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করতেছে। পোশাক শিল্পের মান উন্নয়ন ও উন্নত মানের পোশাক তৈরি করার মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে হবে। 

বেকারত্বের সমস্যা সমাধান

 অধিক পরিমাণে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বেকার শ্রমিকেরা জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে পোশাক শিল্প খাতে ১০ লাখেরও বেশি মহিলা শ্রমিক এবং ২০ লাখেরও বেশি যুবক কাজ করতেছে। একদিকে যেমন বেকারত্ব নিরসন হচ্ছে অপরদিকে বিশ্ব বাজারে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। 

পরিবহন ও বন্দর ব্যবস্থা

পরিবহন ও বন্দর গুলো পোশাক শিল্পের সামগ্রী আমদানি-রপ্তানির ফলে সেখানেও অনেক বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর গুলোর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে পোশাক শিল্প পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। 

প্যাকেজিং শিল্পের প্রসার

পোশাক শিল্প প্যাকেজিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী রপ্তানির প্রয়োজন হয়। যেমন গামটেপ, জিপার, বোতাম ও অন্যান্য রকম শিল্প সামগ্রীর প্রয়োজন হয়ে থাকে যার মাধ্যমে প্যাকেজিং শিল্পের প্রসার ঘটে। 

অন্যান্য অবদান সমূহ

পোশাক শিল্পের জন্য ব্যাংক গুলো লাভবান হচ্ছে। এছাড়াও বীমা কোম্পানির প্রিমিয়ামের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। পোশাক শিল্প খাতের জন্য বাংলাদেশের নতুন নতুন প্রযুক্তির আগমন ঘটতেছে। এর ফলে দেশে উন্নয়ন সার্ধিত হচ্ছে। 

পোশাক শিল্পের সমস্যা 

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অনেক সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এখনো নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সরকার পোশাক শিল্পের অনুকূলে প্রয়ই মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে যাচ্ছে। 

কাঁচামালের অভাবঃ পোশাক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি হল কাঁচামাল। আর বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের বড় সমস্যা হল পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামালের অভাব। 

আরোও দেখুন>

শ্রমিক নিরাপত্তা অভাবঃ পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় ধরনের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব। যার ফলে অনেক শ্রমিক আগুনে পুড়ে। ভবন ধ্বসে আহত ও নিয়ত হচ্ছে। আবার সঠিক সময়ে শ্রমিকের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। 

দক্ষ শ্রমিকের অভাবঃ পোশাক শিল্পের প্রতিষ্ঠান গুলোতে দক্ষ শ্রমিকের অভাবে এবং অধিকাংশ স্বল্প শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত হওয়ার ফলে বিদেশিদের রুচি অনুযায়ী পোশাক তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে অনেক সময় অর্ডার গুলো বাতিল হয়ে যায়।

গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটঃ যেকোনো ধরনের শিল্পীর জন্য প্রধানত দুটি জিনিস প্রয়োজন পড়ে। একটি হল গ্যাস এবং অপরটি হল বিদ্যুৎ কিন্তু বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপন্ন না হওয়ায় অনেক সময় পোশাকশিল্প গুলো হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েন। 

উপসংহার

আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য সকল দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়। তাই পোশাক শিল্পের মান উন্নয়ন এবং সকল প্রকার সমস্যা গুলো সমাধান করার মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে তা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যেহেতু পোশাকশিল্প গুলো বেসরকারি সংস্থার অধীনে তাই সরকারি সুযোগ সুবিধা গুলো বেশি পরিমাণে প্রদান করলে বিশ্ববাজারে টিকে থাকা সম্ভব হবে। এবং সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব হবে।

আপনারা যদি আমাদের উল্লেখিত পয়েন্ট গুলো ব্যাবহার করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারেন তাহলে উপযুক্ত নাম্বার কেরি করতে পারবেন। আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন কিভাবে পোশাকশিল্প রচনাটি লিখতে হয়।

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকে তাহলে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন। এছাড়াওশিক্ষামূলক নিত্য-নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি সেভ অথবা বুকমার্ক করে রাখতে পারেন ধন্যবাদ। 

Leave a Comment