শব্দ কাকে বলে?

আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলার জন্য যে মুখ থেকে যে আওয়াজ বের করি তাকে সাধারণত শব্দ বলে। অর্থ হলো শব্দের প্রাণ। আপনারা যারা শব্দ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন, তারা অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

ভাষার মূল উপাদান বলা হয় শব্দকে। একটি পরিপূর্ণ বাক্যের মৌলিক উপাদান হল শব্দ। যদি একটি নির্দিষ্ট অর্থ বা মনের ভাব  একাধিক ধ্বনি মিলিত হয়ে সঠিক অর্থ প্রকাশ করে তাকে শব্দ বলে। চলুন তাহলে শব্দ কাকে বলে, শব্দ কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

শব্দ কাকে বলে?

সাধারণত মানুষের কন্ঠনিঃসৃত অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বলা হয় শব্দ। যেমন, আমি বাজারে যাই। তবে শব্দ সম্পর্কে বিভিন্ন বাংলা ব্যাকরণবিদগণ শব্দের বিভিন্ন সংজ্ঞা তুলে ধরেছেন। ভাষাবিজ্ঞানের মতে, কোনো ভাষার একককে শব্দ বলে। এক বা অধিক ধ্বনির সমন্বয়ে যদি কোনো নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ পায় তাকে শব্দ বলে।

শব্দ কাকে বলে?

উত্তরঃ সাধারণত মানুষের কন্ঠনিঃসৃত অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বলা হয় শব্দ।

শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

আবার মনের অনুভূতি প্রকাশের জন্য কয়েকটি শব্দের সমন্বয়ে একটি বাক্য তৈরী হয়। যেমন – মেয়েটি প্রতিদিন কলেজে আসে। এই বাক্যে মেয়েটি, প্রতিদিন, কলেজে, আসে, তাদের প্রত্যেকটি একটি শব্দ। আবার, শব্দগুলিও অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা শব্দের সংমিশ্রণ যা শব্দ ছাড়াই বিশেষ অনুভূতি, বস্তু এবং প্রাণী ইত্যাদি প্রকাশ করে। যেমন- আমি, তুমি, ঘোড়া, গাড়ি, সে ইত্যাদি। 

গঠন অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণ মতে,গঠন অনুসারে শব্দ দুই প্রকার। যথা, মৌলিক শব্দ ও সাধিত শব্দ। 

 ১.মৌলিক শব্দঃ যেসব শব্দের বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক শব্দ বলে।  অর্থাৎ, যে সব শব্দকে ভাঙলে আর কোন অর্থসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন, গোলাপ, নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি। 

আরোও দেখুন>

সাধিত শব্দঃ যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করলে মৌলিক একটি অংশে পাওয়া যায় তাকে সাধিত শব্দ বলে। মৌলিক শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমনঃ সমাসবদ্ধ হয়ে, চাঁদের মত মুখ = চাঁদমুখ প্রত্যয় সাধিত – ডুব+উরি = ডুবুরি, উপসর্গযোগে – প্র+শাসন = প্রশাসন ইত্যাদি। 

উৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণ মতে, উৎপত্তিগত ভাবে বাংলা শব্দকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা, ১. তৎসম শব্দ ২. অর্ধ তৎসম শব্দ ৩. তদ্ভব শব্দ ৪. দেশি শব্দ ৫. বিদেশি শব্দ। 

১. তৎসম শব্দঃ যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় চলে এসেছে সে সব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণঃ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, অগ্রহায়ণ, ভাষা ইত্যাদি।

২. অর্ধ তৎসম শব্দঃ যে প্রাচীন ভারতীয় আর্য (বৈদিক/ সংস্কৃত) থেকে মধ্যবর্তী স্তর প্রাকৃতের মাধ্যমে না সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে এবং পরবর্তীকালে লোকমুখে কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত ও বিকৃতি লাভ করেছে তাকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন, কৃষ্ণ, নেমন্তন্ন, খিদে প্রভৃতি।

৩. তদ্ভব শব্দঃ যে শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্য বা সংস্কৃতি থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় না এসে মধ্যবর্তী প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তন লাভ করে বাংলা ভাষায় যোগ হয়েছে তাদের তদ্ভব শব্দ বলা হয়। যেমন,  চর্মকার˂>চম্মআর˂ >চামার। 

৪. দেশি শব্দঃ মুলত দেশি শব্দ হল প্রাচীন কাল থেকে বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক  যারা বাস করতো সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সে সব শব্দকে বলা হয়। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে – কোল, কুলা, ডাগর, টোপল ইত্যাদি। 

৫.বিদেশি শব্দঃ যে সকল শব্দ এ দেশের বাইরের কোন ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ লাভ করেছে সেই শব্দগুলিকে বিদেশি শব্দ বলা হয়। যেমন, আদালত, আলেম, উকিল, ওজর ইত্যাদি। 

অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

 শব্দ হলো বাগযন্ত্রের সাহায্যে বিশেষ কৌশলে উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনি সমষ্টি। অর্থের দিক বিবেচনা করলে শব্দকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা, যৌগিক শব্দ, রূঢ়ি শব্দ এবং যোগরূঢ় শব্দ।

১. যৌগিক শব্দঃ যে সমস্ত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ এবং প্রচলিত অর্থ একই সেই সমস্ত শব্দকে যৌগিক শব্দ বলে। গায়ক, নাতক ইত্যাদি। 

২. রূঢ়ি শব্দঃ যে সমস্ত শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থের সঙ্গে প্রচলিত অর্থের মিল নেই, সেই সমস্ত শব্দকে রুঢ়ি শব্দ বলে। যেমন, হস্তী, গবেষণা, প্রবীণ ইত্যাদি। 

৩. যোগরূঢ় শব্দঃ যে সমস্ত শব্দে প্রচলিত অর্থ এবং ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দুটিই বর্তমান থাকে, তবে মূল অর্থটি কিছুটা সংকুচিত থাকে, সেই শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন, পঙ্কজ, রাজপুত, মহাযাত্রা ইত্যাদি। 

শব্দ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তরঃ

শব্দ কাকে বলে?

সাধারণত মানুষের কন্ঠনিঃসৃত অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বলা হয় শব্দ।

অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

অর্থের দিক বিবেচনা করলে শব্দকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা, যৌগিক শব্দ, রূঢ়ি শব্দ এবং যোগরূঢ় শব্দ।

Leave a Comment